মুন্নিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইলে অফিস থেকে ফোন আসলো। বসের ফোন। মোস্ট প্রায়োরিটি টু বস। এই সময় বউকে বিবেচনা করা মানে বালুর দুর্গ ভেঙ্গে দেওয়া। সেকেন্ড অপচয় না করে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সেই গাম্ভীর্যভাব গলার আওয়াজ। শুনেছি এই আওয়াজ বস হওয়ার আগে শিখতে হয়, চর্চা করতে হয়। এক্ষেত্রে বসকে শতভাগ সফল বলা উচিত।
.
সাদা পাঞ্জাবি গা থেকে রেখে ফরমাল ড্রেস পরে নাবিল বাসা থেকে বের হয়ে হাটছে, রাস্তায় রিক্সা নেই। ইদানিং রিক্সাওয়ালারা শুক্রবার ছুটিতে থাকে। আয়েশ করে। কিন্তু নাবিলরা পারেনা। প্ল্যান ছিল, এই শুক্রবারে ঘুরতে বের হবে। খুব ইচ্ছে ছিল ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী-পায়জামা পরে লেকের পাড়ে মুন্নির হাত ধরে হাটবে। মুন্নির পরনে থাকবে নীল শাড়ি আর হাত পর্যন্ত আবৃত সাদা ব্লাউজ। খোলা চুল লেকের বাতাসে যখন দোল খাবে নাবিলের চোখ পড়বে মুন্নির ঠোঁটের নিচে কালো তিলের দিকে। কি আর করার? মোস্ট প্রায়োরিটি টু বস।
.
কম্পিউটার ডেস্কে নাবিল বসে আছে, বস চেয়ারে বসে ডানে বামে মুভ করছেন। কি যেন ভাবছেন? ছুটির দিনের অফিসের বসরা অন্যরকম হয়। অধীনস্থ কর্মচারীদের উপর ব্যতিক্রম ফিলোসপি প্রয়োগ করেন। কর্মচারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে ঢুঁ মারেন, ভাল মন্দ জানেন। নাবিলের ক্ষেত্রেও তাই হলো। নাবিলের মন খারাপ বস টের পেলেন।
.
- নাবিল সাহেব দেখেন, সবাই কিন্তু বাসায় আয়েশ করছে। অথচ আপনি আর আমি এখন অফিসে। ওদের দেশপ্রেম নেই। আমরা দেশের জন্য কাজ করছি, দেশের পরিবর্তন চাচ্ছি। আপনি আর আমি ছাড়া অফিসের সব কয়টা ছাগল, কি বলেন?
- কিভাবে স্যার?
.
- ছাগলের স্বভাব জানেন? না জানলে শুনেন- মাঠে যখন ছাগল ঘাস খেতে যায়, একা একা থাকে, দলবদ্ধ থাকে না। আপনি চাইলেও এদেরকে একসাথে রাখতে পারবেন না। এই যে আমাদের অফিস, কারো কোন দায়িত্ব নেই। সবাই একা একা থাকে। বুঝলেন?
.
- বুঝলাম স্যার। আপনার কথা ঠিক। ভেড়ার কথা মনে পড়ে গেল স্যার। ভেড়ার বৈশিষ্ট হয়তো আপনি জানেন স্যার। এরা দলবদ্ধ হয়ে ঘাস খায়। সুখে দুঃখে এরা একসাথে থাকে। ছুটির দিনে আপনি আর আমি অফিসে কাজ করছি, একসাথে আছি। আমরা তাহলে ভেড়ার দলে, কি বলেন স্যার?
.
- উই শোড এভোয়েড ফালতু টক, আমরা দেশের জন্য কাজ করছি। সময় নষ্ট করা একদম ঠিক হবে না। কনসানট্রেট টু ওয়ার্ক। নাবিল সাহেব ডেস্কটপে একটি ডক ফাইল খুলেন।
.
- কি নামে ক্রিয়েট করবো স্যার?
.
- 'জিএম ভাবী' নামে ক্রিয়েট করেন। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বাণী লিখতে হবে। কোনটা রেখে কোনটা করি? এতো কাজ, আর পারছি না। নাবিল সাহেব, ওয়েট... জিএম স্যার ফোন দিয়েছেন। আপনি বরং মাসিক সভার চিঠিটা ড্রাফট করুন, ওকে।
.
নাবিল কি-বোর্ডে টপটপ করে চিঠি ড্রাফট করছে। বস জিএম স্যারের সাথে কথা বলছেন। এক হাত দিয়ে পেপার ওয়েট লাটিমের মত ঘুরাচ্ছেন আর জিএম স্যারকে প্রয়োজনের অধিক স্যার স্যার বলে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। বস এতো দ্রুত স্যার বলছেন উচ্চারণটা ষাঁড় ষাঁড় এর মত নাবিলের কানে আসছে। নাবিল হতাশার মৃদু হাসি নিরবে হাসলো। বসের কথা শেষ। বস বিরক্ত স্বরে নাবিলকে বললেন-
.
- নাবিল সাহেব, জিএম ভাবীর ভেতরে ঢুকেন।
- কি যে বলেন স্যার?
- আরে.... ঐ যে... ওই ফাইলটা যেটাতে আমরা বাণী লিখবো।
.
কি-বোর্ডে আবার টপটপ শব্দ শুরু হলো। বসের মগজ থেকে যা বের হচ্ছে নাবিল তা টাইপ করছে.... অকর্মের কর্ম। নাবিলের ফোনে কল আসছে, সম্ভবতঃ মুন্নির ফোন। ভাইব্রেসন দেওয়া। নাবিল কল ধরছে না। কাজে বিঘ্ন হচ্ছে দেখে নাবিল মোবাইল পুরোদমে সাইলেন্ট করে দিলো। মোস্ট প্রায়োরিটি টু বস। রাত অবধি নাবিল অফিসে ছিল। দেশের জন্য কাজ করলো। বস'রা শনিবার বুঝে না, ছুটি বুঝে না। নাবিলরা চাপা স্বভাবের হয়। নাবিলের নিজের বিয়ের ১ম বার্ষিকী বিসর্জন দেয় বস জানেনা। বস বড় বসকে সন্তুষ্ট করে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে আর নাবিল ফিরে এক রাস হতাশা নিয়ে।
.
মিজানুর রহমান
০৩.০২.২০১৭
.
সাদা পাঞ্জাবি গা থেকে রেখে ফরমাল ড্রেস পরে নাবিল বাসা থেকে বের হয়ে হাটছে, রাস্তায় রিক্সা নেই। ইদানিং রিক্সাওয়ালারা শুক্রবার ছুটিতে থাকে। আয়েশ করে। কিন্তু নাবিলরা পারেনা। প্ল্যান ছিল, এই শুক্রবারে ঘুরতে বের হবে। খুব ইচ্ছে ছিল ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী-পায়জামা পরে লেকের পাড়ে মুন্নির হাত ধরে হাটবে। মুন্নির পরনে থাকবে নীল শাড়ি আর হাত পর্যন্ত আবৃত সাদা ব্লাউজ। খোলা চুল লেকের বাতাসে যখন দোল খাবে নাবিলের চোখ পড়বে মুন্নির ঠোঁটের নিচে কালো তিলের দিকে। কি আর করার? মোস্ট প্রায়োরিটি টু বস।
.
কম্পিউটার ডেস্কে নাবিল বসে আছে, বস চেয়ারে বসে ডানে বামে মুভ করছেন। কি যেন ভাবছেন? ছুটির দিনের অফিসের বসরা অন্যরকম হয়। অধীনস্থ কর্মচারীদের উপর ব্যতিক্রম ফিলোসপি প্রয়োগ করেন। কর্মচারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে ঢুঁ মারেন, ভাল মন্দ জানেন। নাবিলের ক্ষেত্রেও তাই হলো। নাবিলের মন খারাপ বস টের পেলেন।
.
- নাবিল সাহেব দেখেন, সবাই কিন্তু বাসায় আয়েশ করছে। অথচ আপনি আর আমি এখন অফিসে। ওদের দেশপ্রেম নেই। আমরা দেশের জন্য কাজ করছি, দেশের পরিবর্তন চাচ্ছি। আপনি আর আমি ছাড়া অফিসের সব কয়টা ছাগল, কি বলেন?
- কিভাবে স্যার?
.
- ছাগলের স্বভাব জানেন? না জানলে শুনেন- মাঠে যখন ছাগল ঘাস খেতে যায়, একা একা থাকে, দলবদ্ধ থাকে না। আপনি চাইলেও এদেরকে একসাথে রাখতে পারবেন না। এই যে আমাদের অফিস, কারো কোন দায়িত্ব নেই। সবাই একা একা থাকে। বুঝলেন?
.
- বুঝলাম স্যার। আপনার কথা ঠিক। ভেড়ার কথা মনে পড়ে গেল স্যার। ভেড়ার বৈশিষ্ট হয়তো আপনি জানেন স্যার। এরা দলবদ্ধ হয়ে ঘাস খায়। সুখে দুঃখে এরা একসাথে থাকে। ছুটির দিনে আপনি আর আমি অফিসে কাজ করছি, একসাথে আছি। আমরা তাহলে ভেড়ার দলে, কি বলেন স্যার?
.
- উই শোড এভোয়েড ফালতু টক, আমরা দেশের জন্য কাজ করছি। সময় নষ্ট করা একদম ঠিক হবে না। কনসানট্রেট টু ওয়ার্ক। নাবিল সাহেব ডেস্কটপে একটি ডক ফাইল খুলেন।
.
- কি নামে ক্রিয়েট করবো স্যার?
.
- 'জিএম ভাবী' নামে ক্রিয়েট করেন। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বাণী লিখতে হবে। কোনটা রেখে কোনটা করি? এতো কাজ, আর পারছি না। নাবিল সাহেব, ওয়েট... জিএম স্যার ফোন দিয়েছেন। আপনি বরং মাসিক সভার চিঠিটা ড্রাফট করুন, ওকে।
.
নাবিল কি-বোর্ডে টপটপ করে চিঠি ড্রাফট করছে। বস জিএম স্যারের সাথে কথা বলছেন। এক হাত দিয়ে পেপার ওয়েট লাটিমের মত ঘুরাচ্ছেন আর জিএম স্যারকে প্রয়োজনের অধিক স্যার স্যার বলে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। বস এতো দ্রুত স্যার বলছেন উচ্চারণটা ষাঁড় ষাঁড় এর মত নাবিলের কানে আসছে। নাবিল হতাশার মৃদু হাসি নিরবে হাসলো। বসের কথা শেষ। বস বিরক্ত স্বরে নাবিলকে বললেন-
.
- নাবিল সাহেব, জিএম ভাবীর ভেতরে ঢুকেন।
- কি যে বলেন স্যার?
- আরে.... ঐ যে... ওই ফাইলটা যেটাতে আমরা বাণী লিখবো।
.
কি-বোর্ডে আবার টপটপ শব্দ শুরু হলো। বসের মগজ থেকে যা বের হচ্ছে নাবিল তা টাইপ করছে.... অকর্মের কর্ম। নাবিলের ফোনে কল আসছে, সম্ভবতঃ মুন্নির ফোন। ভাইব্রেসন দেওয়া। নাবিল কল ধরছে না। কাজে বিঘ্ন হচ্ছে দেখে নাবিল মোবাইল পুরোদমে সাইলেন্ট করে দিলো। মোস্ট প্রায়োরিটি টু বস। রাত অবধি নাবিল অফিসে ছিল। দেশের জন্য কাজ করলো। বস'রা শনিবার বুঝে না, ছুটি বুঝে না। নাবিলরা চাপা স্বভাবের হয়। নাবিলের নিজের বিয়ের ১ম বার্ষিকী বিসর্জন দেয় বস জানেনা। বস বড় বসকে সন্তুষ্ট করে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে আর নাবিল ফিরে এক রাস হতাশা নিয়ে।
.
মিজানুর রহমান
০৩.০২.২০১৭
No comments:
Post a Comment