সময়টা ২০১২ সালের শেষদিক। 'আমি চলে যাচ্ছি' - এটা ছিল সুকন্যার কাছে পাঠানো আমার শেষ SMS. রেল স্টেশনে সিটিং ব্যাঞ্চের এক কোনায় বসে আছি। রাত তখন গভীরের দিকে যাচ্ছে। লোডসেডিং এর কারনে ঘনঘটা অন্ধকার। ঝিঁঝিঁ পোকারা বেশ শব্দ করে ডাক শুরু করলো। মাঝে মাঝে হাত পেছনে দিয়ে মধ্য বয়সের একজন লোক আমার পাশ ঘেঁষে পায়চারী করছেন। সম্ভবতঃ আত্নহত্যা করবেন। ট্রেন আসতে নাকি রাত তিনটা বাঁজবে। 'অপেক্ষার চেয়ে মৃত্যু ভাল' কথিত সাজেশনসটা এক্ষেত্রে বড্ড বেমানান। মরতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। আমরা ট্রেনের অপেক্ষায় আছি...
.
শুনেছি গভীর রাতে প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে। আমারও সুকন্যার কথা খুব মনে পড়ছে। সুকন্যা আর আমি একসাথে হাইস্কুলে পড়েছি। সঙ্গত কারনে আমাদের মাধ্যমিকের ব্যাপ্তিতে কখনও কথা বলার সুযোগটা হয়নি। মনে আছে মোবাইল কিনে প্রথম কলটা সুকন্যার মায়ের নাম্বারে দিয়েছিলাম। আমি হ্যালো বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কড়া নির্দেশনা- 'আর যদি এই নাম্বারে কল আসবে আমি তোমার নাক কেটে দিবো' আমি স্পষ্ট বুঝলাম গলাটা সুকন্যার ছিল। এই প্রথম সুকন্যার সাথে আমার কথা হয়েছে। একটা সময় ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে দূরত্ব কমে যায়। আমরা এখন কথা না বলে থাকতে পারি না। গেল ভালবাসা দিবসে সুকন্যাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ঐদিন আমার নাক কাটার হুমকি কেন দিয়েছিলে? কোন উত্তর না দিয়ে শুধু হাসলো, কিছু বললো না। ছেলেদের নাক হয়তো মেয়েদের কাবু করার মারণাস্ত্র, নইলে সুকন্যা আমার নাক কাটতে চাইলো কেন? স্টেশনে বসে আমিও মৃদু হাসলাম। স্মৃতি শুধু কাঁদায় না, হাসাতেও পারে।
.
রাত সাড়ে তিনটা। আমি ট্রেনের জানালার পাশে বসে আছি। ট্রেন শব্দ করে চলছে। এক পালি ধমকা হাওয়া ধাক্কা দিয়ে চোখের ঘুম কেঁড়ে নিলো। মোবাইল হাতে নিয়ে কল লিস্ট চেক করলাম। সুকন্যা রাতে একবারও কল করেনি। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। মাথা ডান কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, ঘুম আসছে না। গান শুনতে ইচ্ছে করছে। বাপ্পা দার 'পরী' গানটা আমার খুব প্রিয়। শীতের দিনে বৃষ্টির গান শুনতে মন চায় কেন? মানুষের চাহিদা অদ্ভুত! সুকন্যার ব্যাপারটাই এরকম। অনার্সে পড়ুয়া বেকার এই আমাকে ভালবাসে। ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। আমার প্রাসাদ নেই। থাকার জায়গা নেই। একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছি। তবুও সুকন্যা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
.
ট্রেন চলছে। মাথায় হালকা ব্যথা করছে। ফেসবুকে লগ ইন করতেই নিউজফিডে জনপ্রিয় নির্মাতা রেদোয়ান রনির স্ট্যাটাস চোখে পড়লো। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার গল্পটা শুনতে চান রনি ভাই। একজন লিখেছেন- 'কলেজে সুমির সাথে আমার পরিচয়। ভালই চলছিলো। এখন আমি ওর বাচ্চার মামা। ওর বাচ্চা ছাত্র, আমি এখনও ছাত্র। সব ইতিহাস।' কয়েকটি কমেন্ট পড়লাম। হোমপেজে আবার ফিরে গেলাম। ক্রল টানছি.... আরেকটি স্ট্যাটাসে চোখ পড়লো। একজন ভদ্রলোক লিখেছেন- 'কিভাবে ওজন আর মেদ কমাবো?' আমি কমেন্টে লিখলাম সকালে ঘুম থেকে ওঠে দাঁত ব্রাশ করতে করতে আশেপাশে কোন লীগের অফিসে গিয়ে বলবেন, ব্রাদার নিকটস্থ ধানের শীষের অফিসটা কোনদিকে? ওজন আর মেদ কমানোর বাকি দায়িত্ব ওদের। হটাৎ ট্রেন থেমে গেল। ক্রসিং হবে। জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখি মিটমিট আলো জ্বলছে। জোনাকিরা নিখুঁতভাবে প্রকৃতিকে সাজিয়েছে। খুব ক্লান্তি আসছে। চোখে রাজ্যের ঘুম ভর করেছে। ট্রেনে যে কয়েকদিন ঘুমিয়েছি, খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। ঘুমের মাঝে সুকন্যা যদি হারানোর ভয় দেখায়, আমার বেকারত্বকে দায়ী করে! হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেন আবার যাত্রা শুরু করলো। ট্রেনের সবাই ঘুমাচ্ছে। ট্রেন এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের দিকে আর আমি এগুচ্ছি সম্ভাবনা আর প্রতিশ্রুতির দিকে....
.
মিজানুর রহমান
১৮.০২.২০১৭
.
শুনেছি গভীর রাতে প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে। আমারও সুকন্যার কথা খুব মনে পড়ছে। সুকন্যা আর আমি একসাথে হাইস্কুলে পড়েছি। সঙ্গত কারনে আমাদের মাধ্যমিকের ব্যাপ্তিতে কখনও কথা বলার সুযোগটা হয়নি। মনে আছে মোবাইল কিনে প্রথম কলটা সুকন্যার মায়ের নাম্বারে দিয়েছিলাম। আমি হ্যালো বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কড়া নির্দেশনা- 'আর যদি এই নাম্বারে কল আসবে আমি তোমার নাক কেটে দিবো' আমি স্পষ্ট বুঝলাম গলাটা সুকন্যার ছিল। এই প্রথম সুকন্যার সাথে আমার কথা হয়েছে। একটা সময় ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে দূরত্ব কমে যায়। আমরা এখন কথা না বলে থাকতে পারি না। গেল ভালবাসা দিবসে সুকন্যাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ঐদিন আমার নাক কাটার হুমকি কেন দিয়েছিলে? কোন উত্তর না দিয়ে শুধু হাসলো, কিছু বললো না। ছেলেদের নাক হয়তো মেয়েদের কাবু করার মারণাস্ত্র, নইলে সুকন্যা আমার নাক কাটতে চাইলো কেন? স্টেশনে বসে আমিও মৃদু হাসলাম। স্মৃতি শুধু কাঁদায় না, হাসাতেও পারে।
.
রাত সাড়ে তিনটা। আমি ট্রেনের জানালার পাশে বসে আছি। ট্রেন শব্দ করে চলছে। এক পালি ধমকা হাওয়া ধাক্কা দিয়ে চোখের ঘুম কেঁড়ে নিলো। মোবাইল হাতে নিয়ে কল লিস্ট চেক করলাম। সুকন্যা রাতে একবারও কল করেনি। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। মাথা ডান কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, ঘুম আসছে না। গান শুনতে ইচ্ছে করছে। বাপ্পা দার 'পরী' গানটা আমার খুব প্রিয়। শীতের দিনে বৃষ্টির গান শুনতে মন চায় কেন? মানুষের চাহিদা অদ্ভুত! সুকন্যার ব্যাপারটাই এরকম। অনার্সে পড়ুয়া বেকার এই আমাকে ভালবাসে। ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। আমার প্রাসাদ নেই। থাকার জায়গা নেই। একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছি। তবুও সুকন্যা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
.
ট্রেন চলছে। মাথায় হালকা ব্যথা করছে। ফেসবুকে লগ ইন করতেই নিউজফিডে জনপ্রিয় নির্মাতা রেদোয়ান রনির স্ট্যাটাস চোখে পড়লো। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার গল্পটা শুনতে চান রনি ভাই। একজন লিখেছেন- 'কলেজে সুমির সাথে আমার পরিচয়। ভালই চলছিলো। এখন আমি ওর বাচ্চার মামা। ওর বাচ্চা ছাত্র, আমি এখনও ছাত্র। সব ইতিহাস।' কয়েকটি কমেন্ট পড়লাম। হোমপেজে আবার ফিরে গেলাম। ক্রল টানছি.... আরেকটি স্ট্যাটাসে চোখ পড়লো। একজন ভদ্রলোক লিখেছেন- 'কিভাবে ওজন আর মেদ কমাবো?' আমি কমেন্টে লিখলাম সকালে ঘুম থেকে ওঠে দাঁত ব্রাশ করতে করতে আশেপাশে কোন লীগের অফিসে গিয়ে বলবেন, ব্রাদার নিকটস্থ ধানের শীষের অফিসটা কোনদিকে? ওজন আর মেদ কমানোর বাকি দায়িত্ব ওদের। হটাৎ ট্রেন থেমে গেল। ক্রসিং হবে। জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখি মিটমিট আলো জ্বলছে। জোনাকিরা নিখুঁতভাবে প্রকৃতিকে সাজিয়েছে। খুব ক্লান্তি আসছে। চোখে রাজ্যের ঘুম ভর করেছে। ট্রেনে যে কয়েকদিন ঘুমিয়েছি, খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। ঘুমের মাঝে সুকন্যা যদি হারানোর ভয় দেখায়, আমার বেকারত্বকে দায়ী করে! হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেন আবার যাত্রা শুরু করলো। ট্রেনের সবাই ঘুমাচ্ছে। ট্রেন এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের দিকে আর আমি এগুচ্ছি সম্ভাবনা আর প্রতিশ্রুতির দিকে....
.
মিজানুর রহমান
১৮.০২.২০১৭
No comments:
Post a Comment