আমি প্যান্টের পকেটে হাত রেখে শহরের ছোট গলি দিয়ে হাঁটছি। চৈত্র মাসে
পিচগলা রোদ থাকার কথা অথচ আকাশে কালো মেঘ। পকেটে হাত রাখার কারন হিম শীতল
বাতাস বইছে। সময় জানাটা খুব দরকার। আমার সামনের লোকটিকে যদি জিজ্ঞেস করি-
'এই যে ভাই, কয়টা বাঁজে?' পকেট থেকে মোবাইল বের করে মৃদু হাসি দিয়ে বলবে-
সকাল দশটা। কিন্তু তিনি তা না করে সময় দেখলেন হাতঘড়িতে। এ যুগের
বেশীরভাগ ছেলেরা হাতে ঘড়ি থাকা সত্ত্বেও সময় দেখে মোবাইলে। ঘড়িটা
ফ্যাশন। আমি হাঁটছি। বসন্তকাল প্রায় মাঝামাঝি অথচ এখনও শীতের ঘোর কাটেনি।
এটা আমার বয়সে দেখা প্রথম শীতের বসন্ত। জনসম্মুখে নিজের বয়সকে সম্পৃক্ত
করে কথা বলার ক্ষেত্রে আমি ইদানিং খুব সচেতন। একবার দিপু স্যারের কোচিং
ক্লাসে কি কারনে কনফিডেন্ট নিয়ে বলেছিলাম - আমার বয়সেও এটা দেখিনি। স্যার
কপালে ভাঁজ ফেলে বলেছিলেন- 'তোমার আগে কলাগাছ ফল দেয় মিয়া, রাখো তোমার
বয়স'। ঐ দিনে মহিলা সহপাঠীদের বিরামহীন হাসিটা আমাকে এখনও অপমানের পীড়া
দেয়। আমি ফোঁপানি টাইপের শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছি তখনই বৃষ্টি শুরু হলো।
মুষলধারে বৃষ্টি। চারদিকে মানুষের ছোটাছুটি। এই যান্ত্রিক শহরে সবার আচরণ
এই মুহুর্তে এক। কেউ ভিঁজতে চায় না। সবার চোখ আমার ছাতার দিকে। মাঝে মাঝে
ভিন্ন হতে ভাল লাগে। আমি ছাতা উপরের দিকে ছুঁড়ে বৃষ্টিতে ভিঁজবো এই
প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন পাশ ঘেঁষে একটি রিক্সা থামলো। রিক্সাওয়ালা বেল টিপে
আমার মনযোগ আকর্ষণ করতেই দেখি সুকন্যা রিক্সায় বসা। আমি ওকে সুকন্যা নামে
ডাকলেও তার ভাল নাম সাবিলা জাফরিন। আমি না চেনার ভান করে দ্রুত প্রস্থানের
চেষ্টা করছি তখনই সুকন্যার 'নাবিল, এই নাবিল' ডাকে থামতে বাধ্য হলাম। আমি
ঠোঁট টিপে মৃদু হাসি দেয়ার চেষ্টা করে বললাম- কেমন আছিস? সুকন্যা গলার
স্বর বাড়িয়ে বললো- 'তুই দাড়িয়ে কথা বলবে, রিক্সায় ওঠ্।
.
বিরামহীন বৃষ্টি বর্ষণেও রিক্সা চলছে। আপাতত গন্তব্য কোথায় জানিনা। সুকন্যাকে একবার বলা দরকার 'আমরা তাহলে যাচ্ছি কোথায়?' তবে এখন বলা যাবে না। আপাতত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। শহরে ইদানিং বিলবোর্ডের পরিমান বেড়েছে। আমি একটি বড় বিলবোর্ডে লক্ষ স্থির করলাম। কয়েক বছর আগেও এই বিলবোর্ডে বিয়ারিং এর বিজ্ঞাপন ছিল। এখন অাকর্ষণীয় গাড়ির বিজ্ঞাপন। দেশে উন্নতির পথে যাচ্ছে এই বিজ্ঞাপন দেখে তাই মনে হচ্ছে। রিক্সাওয়ালাকে কিছু জিজ্ঞেস করা উচিত কিন্তু ইস্যু পাচ্ছি না। বেচারা মাথা একটু নুইয়ে প্যাডেল মারছে। বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হবে। সুকন্যার দিকে তাকাবো ভাবছি তখনই সে আমার দিকে তাকিয়েই রিক্সার হুড ফেলে দিলো। সুকন্যার গায়ে গাঁঢ় বেগুনী রঙ্গের শাড়ি। খোঁপা খোলা চুল। বৃষ্টির দিনে গাঁঢ় বেগুনী শাড়ি আর ভেঁজা চুলে মেয়েদের এতো সুন্দর লাগে সুকন্যাকে দেখে প্রথম উপলব্দি করলাম। এতো বৃষ্টিতে হটাৎ হুড ফেলার কারন বৃষ্টিস্নান নাকি রিক্সাওয়ালার প্রতি তার সহমর্মিতা কে জানে? অনেক পথ এসে গেলাম অথচ সুকন্যা কোন কথা বলেনি।
- কিরে, রিক্সায় তুলে খুব মুডি হয়ে গেলে নাকি? কোন কথা বলছিস না যে?
- তোর মোবাইল দেয় তো। বাসায় একটা কল করবো। আমার মোবাইলে চার্জ নাই।
ফোনে কথা শেষ হতেই সুকন্যাকে ফের প্রশ্ন-
- তোর আর খবর কি? পড়াশোনার কি অবস্থা? থাকিস কোথায়? সেই ইন্টারমিডিয়েট পর তোর সাথে প্রথম দেখা।
- তুই এখনো বদলালে না নাবিল! এখনও এতো প্রশ্ন এক সাথে করার অভ্যাস তোর আছে! বাদ দে, তোর খবর কি? পড়াশোনা শেষ করে চাকরি-বাকরি করছিস নাকি?
- আছি এইতো একটা অফিসে।
- এই মামা থামান তো। নাবিল, আমি তাহলে যাই। ভাল থাকিস।
.
সুকন্যার সাথে ইদানিং ফোনে ঘনঘন কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে সে ফোনে অদ্ভুত ধরনের প্রশ্ন করে। আজ জিজ্ঞেস করলো- 'নাবিল, মিস করা আর ফিল করা কি এক?' তার প্রশ্ন শুনে আমার ভেতর এক অজানা কৌতুহল তৈরি হলো। মেয়েরা প্রেমে পড়লে মিস আর ফিল করার মধ্যে মিল-অমিল খুঁজে। সুকন্যা কি কারো প্রেমে পড়েছে, কে জানে?
.
আমি সিএনজির পেছনে বামপাশে বসে আছি। ট্রাফিক জ্যাম ছাড়তে আধাঘন্টা লাগবে। পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছি। প্রথম পাতায় দেখলাম বড় করে শিরোনাম- বাবার পেশাগত পরিচয় ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজার অকাল মৃত্যু!! বিস্তারিত পড়তে গিয়ে গা শিওরে উঠলো। আফরোজা বাবা ডিসি অফিসের অফিস সহকারী এই বিষয় ছেলে পক্ষ জানতে পেরে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। অাফরোজা অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে। আমি মোবাইল বের করে সময় দেখবো তখন দেখি সুকন্যা এসএমএস করেছে। এবারের ৩৫ তম বিসিএস এ সে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছে। মোবাইল পুরোদমে অফ করে লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। প্রচন্ড মাথা ধরেছে। ৮ বছরের একটি শিশু ফুল কেনার জন্য বিরক্ত করছে। কিছু বলতে পারছি না। পথ শিশুদের জন্য মায়া হয়। আমি কয়েকটি গোলাপ কিনে হাতে নিলাম। এতোক্ষণে ট্রাফিক জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে। সামনের কোন অস্থায়ী ডাস্টবিনে গোলাপগুলো ফেলে দিবো... ফুল আমার জন্য নয়।
.
মিজানুর রহমান
০৬.০৪.২০১৭
.
বিরামহীন বৃষ্টি বর্ষণেও রিক্সা চলছে। আপাতত গন্তব্য কোথায় জানিনা। সুকন্যাকে একবার বলা দরকার 'আমরা তাহলে যাচ্ছি কোথায়?' তবে এখন বলা যাবে না। আপাতত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। শহরে ইদানিং বিলবোর্ডের পরিমান বেড়েছে। আমি একটি বড় বিলবোর্ডে লক্ষ স্থির করলাম। কয়েক বছর আগেও এই বিলবোর্ডে বিয়ারিং এর বিজ্ঞাপন ছিল। এখন অাকর্ষণীয় গাড়ির বিজ্ঞাপন। দেশে উন্নতির পথে যাচ্ছে এই বিজ্ঞাপন দেখে তাই মনে হচ্ছে। রিক্সাওয়ালাকে কিছু জিজ্ঞেস করা উচিত কিন্তু ইস্যু পাচ্ছি না। বেচারা মাথা একটু নুইয়ে প্যাডেল মারছে। বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হবে। সুকন্যার দিকে তাকাবো ভাবছি তখনই সে আমার দিকে তাকিয়েই রিক্সার হুড ফেলে দিলো। সুকন্যার গায়ে গাঁঢ় বেগুনী রঙ্গের শাড়ি। খোঁপা খোলা চুল। বৃষ্টির দিনে গাঁঢ় বেগুনী শাড়ি আর ভেঁজা চুলে মেয়েদের এতো সুন্দর লাগে সুকন্যাকে দেখে প্রথম উপলব্দি করলাম। এতো বৃষ্টিতে হটাৎ হুড ফেলার কারন বৃষ্টিস্নান নাকি রিক্সাওয়ালার প্রতি তার সহমর্মিতা কে জানে? অনেক পথ এসে গেলাম অথচ সুকন্যা কোন কথা বলেনি।
- কিরে, রিক্সায় তুলে খুব মুডি হয়ে গেলে নাকি? কোন কথা বলছিস না যে?
- তোর মোবাইল দেয় তো। বাসায় একটা কল করবো। আমার মোবাইলে চার্জ নাই।
ফোনে কথা শেষ হতেই সুকন্যাকে ফের প্রশ্ন-
- তোর আর খবর কি? পড়াশোনার কি অবস্থা? থাকিস কোথায়? সেই ইন্টারমিডিয়েট পর তোর সাথে প্রথম দেখা।
- তুই এখনো বদলালে না নাবিল! এখনও এতো প্রশ্ন এক সাথে করার অভ্যাস তোর আছে! বাদ দে, তোর খবর কি? পড়াশোনা শেষ করে চাকরি-বাকরি করছিস নাকি?
- আছি এইতো একটা অফিসে।
- এই মামা থামান তো। নাবিল, আমি তাহলে যাই। ভাল থাকিস।
.
সুকন্যার সাথে ইদানিং ফোনে ঘনঘন কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে সে ফোনে অদ্ভুত ধরনের প্রশ্ন করে। আজ জিজ্ঞেস করলো- 'নাবিল, মিস করা আর ফিল করা কি এক?' তার প্রশ্ন শুনে আমার ভেতর এক অজানা কৌতুহল তৈরি হলো। মেয়েরা প্রেমে পড়লে মিস আর ফিল করার মধ্যে মিল-অমিল খুঁজে। সুকন্যা কি কারো প্রেমে পড়েছে, কে জানে?
.
আমি সিএনজির পেছনে বামপাশে বসে আছি। ট্রাফিক জ্যাম ছাড়তে আধাঘন্টা লাগবে। পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছি। প্রথম পাতায় দেখলাম বড় করে শিরোনাম- বাবার পেশাগত পরিচয় ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজার অকাল মৃত্যু!! বিস্তারিত পড়তে গিয়ে গা শিওরে উঠলো। আফরোজা বাবা ডিসি অফিসের অফিস সহকারী এই বিষয় ছেলে পক্ষ জানতে পেরে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। অাফরোজা অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে। আমি মোবাইল বের করে সময় দেখবো তখন দেখি সুকন্যা এসএমএস করেছে। এবারের ৩৫ তম বিসিএস এ সে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছে। মোবাইল পুরোদমে অফ করে লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। প্রচন্ড মাথা ধরেছে। ৮ বছরের একটি শিশু ফুল কেনার জন্য বিরক্ত করছে। কিছু বলতে পারছি না। পথ শিশুদের জন্য মায়া হয়। আমি কয়েকটি গোলাপ কিনে হাতে নিলাম। এতোক্ষণে ট্রাফিক জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে। সামনের কোন অস্থায়ী ডাস্টবিনে গোলাপগুলো ফেলে দিবো... ফুল আমার জন্য নয়।
.
মিজানুর রহমান
০৬.০৪.২০১৭
No comments:
Post a Comment