চলন্ত গাড়ি যেভাবে হাত ইশারা দিয়ে থামানো হয়, আমি ঢালু রাস্তায় দাড়িয়ে একই ভঙ্গিতে লোকটিকে থামার জন্য বললাম। লোকটি আমার অপরিচিত, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। মাথার চুল কালো হলেও বেশিরভাগ চুল অাধপাঁকা। স্যুট টাই পরলে আধপাঁকা চুলওয়ালাদের ব্যাংকারদের মত লাগে। আমার ধারনা- স্যুট টাই পরলে এই লোককে ব্যাংকার মনে হবে না, বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী লাগবে। বিজ্ঞানীদের মত এই লোকেরও গোঁফ আছে। কালো গোঁফ। ওয়ালেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে লোকটির হাতে দিয়ে বললাম- ভাই, এই টাকা একটি পার্সোনাল নম্বরে বিকাশ করতে পারবেন? সামনে বিকাশের দোকান পাবেন। মাঝে মাঝে এরকম অদ্ভুত কান্ডের মাধ্যমে আমি মানুষের উপর একধরনের সাইকোলজি প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। সেদিন ডাক বিভাগের একজন কর্মকর্তাকে বললাম- আপনার দপ্তরের ই-মেইল ঠিকানা কি? নাক কপালের দিকে দ্রুত তুলতে গিয়ে চশমার ফ্রেমের ফাঁকে আটকে যাওয়ার হাল দেখে অনুভব করলাম প্রত্যেক মানুষ নিজের অবস্থান ধরে রাখতে চায়। ডাক বিভাগের সংকটাপন্ন সময়ে ইমেইল ঠিকানা চাওয়াটা নিতান্ত অপমানের কাজ।
.
রিং শুনে প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি রুপা ফোন করেছে। ইদানিং আমি ওকে রুপা বলে ডাকি কেন? রুপা তো তার আকিকা করা নাম না। হুমায়ুন আহমেদ এর ধারনা- পৃথিবীর মেয়েরা রুপা আর সব ছেলেরা হিমু। আমার দৃষ্টিতে সুকন্যাকে রুপা বলে ডাকা অযৌক্তিক নয়। তবে আমি হিমু হতে নারাজ। আমি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারি না যা হিমু পারে। গত বছর ১৭ই মার্চ রাহাতকে এসএমএস দিয়ে বলি- 'তাড়াতাড়ি সুকন্যাকে ফোন করে বল- আমি হাসপাতালে, সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছি'। মিনিট খানেকের মধ্যে সুকন্যা দরজা খুলে দ্রুত বের হওয়ার সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। দরজার সামনে আমার সাথে ওর ধাক্কা লাগতেই চিৎকার না করার জন্য সুকন্যার মুখে হাত চেপে বলি- শুভ জন্মদিন সুকন্যা। এটা সারপ্রাইজ না বিভ্রান্ত করা আমি জানি না। এতোক্ষনে লোকটি গেইটের কাছাকাছি চলে গেল। বিকাশের নাম্বার নেয়নি। মানুষ যখন অলৌকিকভাবে কিছু পায় কিংবা অকল্পনীয় কিছু ঘটে তখন বিশেষ ব্যক্তিদের নাক কাঁপে। পাঁচ হাজার টাকা পেয়ে লোকটির নাক কাঁপলো কিনা কিংবা অন্ধকারে ঐ দিন সুকন্যার নাক কাপলো কিনা আমার দেখা হয়নি। হাত ঘড়িতে লক্ষ করলাম সকাল সাড়ে নয়টা। দ্রুত অফিস যেতে হবে।
.
অফিসে নতুন বস জয়েন করেছেন। বস মানে মোটা পেট, কমর থেকে এক হাত উপরে চিকন বেল্ট দ্বারা শার্ট ইন আর নাগের ডগায় পাওয়ার চশমা। কিন্তু নতুন বস এরকম নয়, হালকা পাতলা গড়ন। কথার মধ্যে রহস্য রেখে কথা বলেন। আমি নতুন বসের সামনে বসা। হটাৎ বস বললেন- নাবিল সাহেব, পৈশাচিক আনন্দ বুঝেন? না বুঝলে শুনেন- রাস্তায় মজমা বসিয়ে এক লোক লেকচার দিচ্ছে- "আনোয়ারের টেস্টি হজমি, এই টেস্টি হজমি খেলে পেট ফাঁপা ভাল হয়। গ্যাসে আপনার পেট ভরে গেছে, পায়খানা কষান। পেট আপনার মোটা হয়ে গেছে? নো টেনশন! আপনার জন্য আছে আনোয়ারের টেস্টি হজমি।" আমার চোখ গেল লেকচারার এর পেটের দিকে। ইয়া মোটা পেট। আমি উনার পেটে হাত দিতেই সবাই হাসলো। বুঝলেন নাবিল সাহেব, এটাকে পৈশাচিক আনন্দ বলে। বস হুহু করে হাসছেন। আমি বললাম, দেখেন স্যার, আপনার গল্পে আমি আনন্দ নেওয়ার কিছু পাইনি। বস হুক হুক করে পানি খেলেন। আমি মৃদু হাসি দিয়ে বললাম- স্যার, এটাই পৈশাচিক আনন্দ। বস কপালের ঘাম টিস্যু দিয়ে মুছলেন। আমার নাক কাঁপতে লাগলো।
.
মিজানুর রহমান
১০.০৩.২০১৭
.
রিং শুনে প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি রুপা ফোন করেছে। ইদানিং আমি ওকে রুপা বলে ডাকি কেন? রুপা তো তার আকিকা করা নাম না। হুমায়ুন আহমেদ এর ধারনা- পৃথিবীর মেয়েরা রুপা আর সব ছেলেরা হিমু। আমার দৃষ্টিতে সুকন্যাকে রুপা বলে ডাকা অযৌক্তিক নয়। তবে আমি হিমু হতে নারাজ। আমি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারি না যা হিমু পারে। গত বছর ১৭ই মার্চ রাহাতকে এসএমএস দিয়ে বলি- 'তাড়াতাড়ি সুকন্যাকে ফোন করে বল- আমি হাসপাতালে, সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছি'। মিনিট খানেকের মধ্যে সুকন্যা দরজা খুলে দ্রুত বের হওয়ার সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। দরজার সামনে আমার সাথে ওর ধাক্কা লাগতেই চিৎকার না করার জন্য সুকন্যার মুখে হাত চেপে বলি- শুভ জন্মদিন সুকন্যা। এটা সারপ্রাইজ না বিভ্রান্ত করা আমি জানি না। এতোক্ষনে লোকটি গেইটের কাছাকাছি চলে গেল। বিকাশের নাম্বার নেয়নি। মানুষ যখন অলৌকিকভাবে কিছু পায় কিংবা অকল্পনীয় কিছু ঘটে তখন বিশেষ ব্যক্তিদের নাক কাঁপে। পাঁচ হাজার টাকা পেয়ে লোকটির নাক কাঁপলো কিনা কিংবা অন্ধকারে ঐ দিন সুকন্যার নাক কাপলো কিনা আমার দেখা হয়নি। হাত ঘড়িতে লক্ষ করলাম সকাল সাড়ে নয়টা। দ্রুত অফিস যেতে হবে।
.
অফিসে নতুন বস জয়েন করেছেন। বস মানে মোটা পেট, কমর থেকে এক হাত উপরে চিকন বেল্ট দ্বারা শার্ট ইন আর নাগের ডগায় পাওয়ার চশমা। কিন্তু নতুন বস এরকম নয়, হালকা পাতলা গড়ন। কথার মধ্যে রহস্য রেখে কথা বলেন। আমি নতুন বসের সামনে বসা। হটাৎ বস বললেন- নাবিল সাহেব, পৈশাচিক আনন্দ বুঝেন? না বুঝলে শুনেন- রাস্তায় মজমা বসিয়ে এক লোক লেকচার দিচ্ছে- "আনোয়ারের টেস্টি হজমি, এই টেস্টি হজমি খেলে পেট ফাঁপা ভাল হয়। গ্যাসে আপনার পেট ভরে গেছে, পায়খানা কষান। পেট আপনার মোটা হয়ে গেছে? নো টেনশন! আপনার জন্য আছে আনোয়ারের টেস্টি হজমি।" আমার চোখ গেল লেকচারার এর পেটের দিকে। ইয়া মোটা পেট। আমি উনার পেটে হাত দিতেই সবাই হাসলো। বুঝলেন নাবিল সাহেব, এটাকে পৈশাচিক আনন্দ বলে। বস হুহু করে হাসছেন। আমি বললাম, দেখেন স্যার, আপনার গল্পে আমি আনন্দ নেওয়ার কিছু পাইনি। বস হুক হুক করে পানি খেলেন। আমি মৃদু হাসি দিয়ে বললাম- স্যার, এটাই পৈশাচিক আনন্দ। বস কপালের ঘাম টিস্যু দিয়ে মুছলেন। আমার নাক কাঁপতে লাগলো।
.
মিজানুর রহমান
১০.০৩.২০১৭
No comments:
Post a Comment